জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে ইসলামীক দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের অঘোষিত রাজনৈতিক জোট নিয়ে আলোচনা হলেও নারায়ণগঞ্জে স্রোতের বিপরীতে হাঁটছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী নেতৃত্বে দেশের অধিকাংশ ইসলামিক দলগুলো যখন এক হওয়ার চেষ্টা করছে তখন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ শাখা গণসংহতিকে নিয়ে চালাচ্ছে রাজনৈতিক কার্যক্রম।
সোমবার (২৩ জুন) বিকাল ৪টায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর কার্যালয়ে গণসংহতি আন্দোলন-এর সঙ্গে যৌথ সভা করে।
বিষয়টি নিয়ে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্তরে চলছে আলোচনা ও সমালোচনা। অনেকেই মনে করছেন নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পরিবারের পতনের পর বিএনপি অভ্যন্তরীণ কোন্দলে রয়েছে। এই সুযোগে নারায়ণগঞ্জে ভোটের রাজনীতিতে পুরোদমে কাজ করছে জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। তাই জামায়াতের এই উত্থানকে সহজেই মানতে পারছে না। ছোট রাজনৈতিক দলগুলো।
মূলত গণসংহতি আন্দোলন বামধারার রাজনীতি করার কারণে অনেকেই প্রশ্ন তুলছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যক্রম নিয়ে। হঠাৎ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে চরমোনাই পন্থিদের এক সঙ্গে বসার বিষয়টি সহজভাবে গ্রহণ করতে পাড়ছে না সাধারণ মানুষ। এর আগে এই দু’দলের একসঙ্গে এমন কার্যক্রম দেখেনি নারায়ণগঞ্জবাসী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বৈঠকে উপস্থিত থাকা ইসলামী আন্দোলনের এক নেতা বলেন, আমরা সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করছি। আগামী নির্বাচনের আগে কোন দলের কার সঙ্গে জোট হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়। জামায়াত তাদের মতো নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। আমরাও আমাদের পরিকল্পনায় এগিয়ে চলছি। যদি কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত আসে জামায়াতের সঙ্গে কাজ করার তখন আমরা সেভাবে কাজ করবো। তার আগে আমরা আমাদের পরিকল্পনায় হাঁটতে চাই।
জামায়াত ছাড়াও আরও অনেক ইসলামীক দল নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তাদের ছাড়ে গণসংহতির সঙ্গে বেশি দেখা যাচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কারও ওপর এখনই ভরসা করতে চাই না। আমরা একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে আরেকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসতেই পারি।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং গণসংহতি আন্দোলন নেতৃবৃন্দ সাতটি বিষয়ে অনতিবিলম্ব যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
বিষয়গুলো হলো-
১. মাদক এবং কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনকে শূন্য নীতি গ্রহণ করতে হবে এবং এগুলোর সাথে সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি-দখলের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে রাজনৈতিক পক্ষপাতহীন পদক্ষেপ নিতে হবে।
৩. করোনা মোকাবিলায় আইসিইউ সেবা চালু করতে হবে। হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত করোনা টেস্টের কীট সরবরাহ করতে হবে।
৪. ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও প্রতিকারে জনসচেতনতা উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ডেঙ্গু শনাক্তে পর্যাপ্ত কীট ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. যানজট নিরসনে থ্রি হুইলার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং ফুটপাতকে পথচারীদের চলাচলের উপযুক্ত করতে হবে।
৬. দ্রুত রাস্তাঘাট মেরামত কাজ সম্পন্ন করে জনভোগান্তি দূর করতে হবে।
৭. আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন আমলে সংগঠিত গুম-খুন হত্যাসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র জনতার হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগর কার্যালয়ে দুই দলের যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরে সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ'র নেতৃত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন- মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ, শেখ মুহাম্মদ হাসান আলী, মাওলানা শামসুল আলম, মুহা. ইসমাইল হোসেন, মুহা. শফিকুল ইসলাম, মুহা. মোস্তফা তালুকদার, সাইম হুসাইন, শাহ্ মুহাম্মদ ছগির হোসেন।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়কারী তরিকুল সুজনের নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন, বিপ্লব খান, অঞ্জন দাস, পপি রানী সরকার, আলমগীর হোসেন আলম, জাহিদ সুজন, নাজমা বেগম, মো. ইব্রাহিম।